top of page

আঁতুড়ঘর । রাজা সরকার

Anturghar Front Cover Only.jpg

বিষয় : স্মৃতিকথা

প্রচ্ছদ: শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়

মূল্য : ₹ ২৮০

মণিকর্ণিকা প্রকাশনী

যোগাযোগ (কল ও হোয়াটস্অ্যা‌প) : 8240333741

Amazon Button PNG.png
Our Store Button PNG.png
আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির কিছু অংশ এখানে দেওয়া হল।

                আমি পশ্চিমবঙ্গের মানুষ, যদিও জন্মসূত্রে পূর্ববঙ্গের - অধুনা যাকে বলা হয় ‘বাংলাদেশ’।                ১৯৬৪ সালের এক সকালে আমাদের ছাড়তে হয় জন্মের ভিটেমাটি। তখন আমার বয়স                    এগারো।

              এটা এখন ইতিহাসের বিষয়। দেশভাগ বা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের জন্ম বা সে দেশে একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু অংশের মানুষের অবস্থা - এই সবই এখন গবেষণার বিষয়। কিন্তু নিজের বিবর্তনের দীর্ঘ সময় ধরে লক্ষ্য করেছি যে আজও আমি আমার জন্মসূত্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। পারিনি অখণ্ড হয়ে যেতে। বর্তমান প্রেক্ষিতে এটা কোনো ব্যর্থতা কিনা, জানি না।

        অথচ একই শ্রেণি-অবস্থানের মানুষদের দেখেছি যে তাদের এ-বিষয়ে কোনো যাতনা নেই। সেসব তেমন মনেও নেই অনেকের। মনে নেই, নাকি মনে রাখার ইচ্ছেটাও নেই! সেটা অবশ্য জানা যায় না। এ-প্রসঙ্গে কোনো কথা উঠলেই প্রথমে যা শুনতে হয় তার নির্যাস অনেকটা এরকম - ‘না না, ওই দেশের কথা ছাড়ো তো, ওখানে থাকতে হলে হয় মুসলমান হও, নয়তো জান-মান ওদের কাছে জমা দাও। যে কয়খান হিন্দু এখনও ওখানে আছে তারা কি ভালোমতো আছে মনে করো? খোঁজ নিয়ে দ্যাখো, বুঝতে পারবে, তখন তোমার এইসব আবেগ কোথায় থাকে দেখব।’

        এভাবেই এসব কথা চলতে থাকে। আমি কোনো উত্তর দিই না বা বলা ভালো দিতে পারি না। দিতে গেলে তথ্য দিতে হয়, তথ্য দিয়ে আবার বিশ্বাস করাতে হয়। অনেক সময় তাতে কিছুটা কাজ হয়। অনেক সময় কাজ হয় না। বুঝতে পারি - ঘা শুকোয়নি আজও। হতে পারে, কিন্তু ‘ঘা’ যে সবখানি সত্য নয় তা কবে শোনা যাবে?

         একটা আঘাত, আঘাত থেকে ঘা, যা অস্বীকার করা যায় না। ফলে আমাকে শুনতেই হয়। যেহেতু কথাটা আমিই তুলি। কিন্তু আমার মতো দ্বিখণ্ড কে-ই বা আছে আর! না, কেউ নেই। সত্যিই কি কেউ নেই - একা এক অদৃশ্যের এই আত্মরক্ষায়?

        আমি আর কোনো কথাই বলতে পারি না। কিছুতেই ঢুকতে পারি না এই বেড়াজাল ভেঙে। যদিও বুঝতে পারি এর ভেতরই জমে আছে দ্বিখণ্ডিতের যন্ত্রণা। জেগে আছে সেই সব উ

দ্‌বাস্তু বালক-বালিকারা।

ত্রিশ চল্লিশ পঞ্চাশ ষাট দশকের বিবর্ণ বছরগুলো যেন বাতাসে উড়ছে। পাশের বাড়ির ঘটি (পশ্চিমবঙ্গীয়) বউটি বলছে, ‘দূর হ, দূর হ মুখপোড়ারা, বিদেয় হ দিকিনি।’

তো এরা যাবে কোথায়?

        তখন আমরা ফাইভ সিক্সের পড়ুয়া। সে সময় এক গভীর বর্ষার দিনে আমরা দু-ভাই       গেছি উত্তরের মাঠের দিকে, আমাদের একমাত্র গাইটির সন্ধানে। কোন সকাল থেকেই          সে ঘাসের খোঁজে বেপাত্তা।

             আমাদের অঞ্চলের বর্ষা মানে ভীষণ জল-কাদা। কিন্তু তার মধ্যেই সেখানে গাই খোঁজার বদলে দু-ভাই অনেকক্ষণ তাকিয়েছিলাম উত্তরের পাহাড়টির দিকে। বোধহয় ওটাই প্রথম পাহাড় দেখা। সেদিন মেঘে-ঢাকা সমস্ত আকাশ একটুখানি চাদর সরিয়ে একটি বৃষ্টিভেজা পাহাড়শ্রেণি শুধু আমাদের দেখানোর জন্যই উত্তর-দিগন্তে সাজিয়ে দিল! নীল রঙের পাহাড়! গাই খোঁজার বদলে আমরা দু-ভাই জল-কাদার মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ওই পাহাড়শ্রেণির দিকে চেয়েছিলাম।

         বিস্ময়ে হতবাক আমার সম্বিৎ ফিরল দাদার কথায় - ‘এইডা গারো পাহাড়, ভূগুল বইয়ে পড়ছ নাই উত্তরে গারো পাহাড় দক্ষিণে বঙ্গপসাগর - ঐডা হেই গারো পাহাড়, পার অইলে ওইপারে হিন্দুস্থান।’

       সেই রাতে আমি ওই নীল পাহাড়শ্রেণির কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। দাদা তখন আমার উপাস্য। ভাবি - ও কত জানে! একদিন তাই ওকে প্রস্তাব দিলাম - ‘চল না দাদা, একদিন যাইয়া পাহাড়ডারে দেইখ্যা আসি।’ দাদা উত্তর দিল - ‘দুর বেক্কল, ওইডা ম্যালা দূর।’

        আমাদের অঞ্চলটাকে ‘ভাটি’ অঞ্চল বলা হতো। কেন হতো তা ছোটোবেলায় জানা হয়নি কখনও। তবে এর সঙ্গে যে ঠাট্টাটা মিশেছিল তার জন্য সেই ছোট্ট মনে ব্যথা-অভিমান ছিল অনেক। কারণ ওই ঠাট্টাটা করা হতো আমাকে সামনে পেলেই। আর তা করতেন প্রায়শই মুখোমুখি হওয়া আমার এক দূর-সম্পর্কের দাদু। যেমন - ‘এই যে ভাইট্ট্যা গাবর আইয়ো এইবর।’ আর কাছে গেলেই বলতেন - ‘ভাইট্ট্যা গাবর, ত্যালের ডাবর, খায় কচুর মোড়া... (পরের অংশটি উহ্য থাকল)।

       শোনা মাত্রই আমার চোখমুখ যেত লাল হয়ে। আমি তখন পালাতে চাইতাম। কিন্তু তার আগেই তাঁর বড়ো হাতের থাবায় আমি বন্দি, দিশেহারা।

8b1d4e_b0115563029a4cb69f2529bfcf8cda18_mv2.jpg
8b1d4e_b0115563029a4cb69f2529bfcf8cda18_mv2.jpg
bottom of page