খেলামাঠের একধারে এই গাছটা যে কবে কে লাগিয়েছিল, আজ আর কারো মনে নেই। পাড়ার ছেলের দল জন্ম থেকে দেখছে ও আছে তো আছেই। ও কি শুধু একা? এমন কত গাছ সেই অজানকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছে গ্রামের ইতস্তত, তাদের জন্মবৃত্তান্ত কেই বা জানে? এইটা একখানা পাতাভরা ঝাঁকড়া গাছ, সুঠাম বাদামি কাণ্ড, গায়ে বয়সের হিজিবিজি। ওর ডাল এক থেকে দুই, দুই থেকে চার, এইভাবে ভাগ হতে হতে হাজার হাজার প্রশাখা ছড়িয়ে গিয়েছে আকাশের নীচে। এই গাছে মধুফল হয়, তাই ওকে সবাই ‘মধুর’ বলে ডাকে। যুদ্ধ সেরে সমস্ত সৈন্য চলে গেছে মাঠ ছেড়ে, কেবল নড়তে ভুলে গেছে একজন সৈনিক, সে হল এই গাছ, এমনভাবে শূন্যমাঠের কোলে দাঁড়িয়ে থাকে মধুর।
গ্রামের নাম ক্ষীরজমি, লোকে বলে এখানকার মাটি মাস-বিয়োনি। আজ বীজ ছড়াও, মাস পুরতে না পুরতেই দেখবে ফনফনিয়ে উঠেছে শস্যগাছ, তার মুখে ঝুমঝুম করছে পাকা ধান-গম, কিংবা সর্ষের ক্ষেত ভরে গেছে ফুটকি ফুটকি হলুদে। এমন মাটি পেয়ে মধুরও বছরে দুবার করে ভরে ওঠে ফলে। প্রথমে ধপধপে ফুল ধরে, এ-দেশ ও-দেশ থেকে আসে অজস্র ভ্রমর, মৌমাছির হাঁকডাক শোনা যায়, বোলতাদের ডানার কম্পনে তিরতির করে চারধার। দিন কতক যেতে না যেতে সাদা ফুলের নীচ থেকে একটু একটু করে জন্ম নেয় গোল ফল। বড়ো হতে হতে ফুলটাকে গ্রাস করে কেবল বুকের কাছে একটুখানি কেশর জাগিয়ে হাওয়ায় দুলতে থাকে হালকা গোলাপি রঙের মধুফল। তখন গাঁ-শুদ্ধ ছেলেবুড়োর উৎসব। ফল-ভরা গাছের ডালে ডালেই বেলা কেটে যায়।
শ্রাবণঋতু পার হয়ে যাও, ফেরিওয়ালা | শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
Within Chandannagar : 20 rs
Out of Chandannagar : 65 rs
Out of West Bengal : 85 rs