হারানো দুপুরবেলার পটদীপ মুলতানি ভীমপলাশিরা
শীত আর গরমের লম্বা ছুটির দিনগুলোর কথা ভেবে মনকেমন করে। আমাদের দোতলা বাড়ির একতলার বড়ো ঘর যেটা কিনা আমার আঁকা শেখার, অঙ্ক কষার, আর পরের দিকে রেওয়াজের জন্য নির্দিষ্ট ছিল, তার গা লাগোয়া লম্বা বারান্দার পরে হাত দশ চলন রাস্তার গায়েই বাড়ির পাঁচিল। পাঁচিলে ঠেসান দিয়ে একটা লম্বা ক্রোটন গাছ, ফুরুস ফুলের গাছ, আর ডবল টগরের গাছ। বারান্দার সীমানায় দুহাত উঁচু ইটের দেয়াল শুরু থেকে শেষ অবধি। রাস্তায় এসে গাছের আড়াল থেকে মুন্না ডাক দিত নরম গলায় ‘বৈকালি, এই বৈকালি’। ও একাই কেবল এই নামে চিনত আমায়। বিকেলে জন্মেছিলাম তাই জেঠু নাম রেখেছিলেন ‘বৈকালি’। সময়ের সঙ্গেসঙ্গে প্রয়োজন-অপ্রয়োজনের জটিলতায় আমার খুব পছন্দের সে নাম হারিয়েই গেছে আজ। মুন্নাদের বাড়ি আমার বাড়ির বাঁ-হাত ধরে এগিয়ে গিয়ে দুটো বাড়ির পরে ডানদিকে মানে ইংরেজি এল এর মত গেলে তার শেষপ্রান্তে। ও কলকাতায় মনোহরপুকুরে মামাবড়িতে থেকে পড়াশুনো করত আর তাই ইস্কুলের ছুটিগুলোতে সুযোগ পেত মা বাবা ভাই এর সঙ্গে কয়েকটা দিন কাটিয়ে যাবার; আর হ্যাঁ আমাকে বড্ড ভালোবাসত। গায়ের রং কালো বলে মুন্নাকে নানাজনের কাছে নানান কথা শুনতে হত তাই মনের মধ্যে অনেক কষ্ট। ওর মিষ্টি ঠাণ্ডা স্বভাব, চিকণ মুখ আর মা কালির মতো ঢেউ খেলানো একপিঠ চুল সব আমার খুব পছন্দের ছিল। আমার মাথায় বরাবর ফুরফুরে কিন্তু বিশ্বস্ত কয়েক গাছি, বিশ্বস্ত কারণ এতদিনেও তারা আমাকে ছেড়ে যায়নি! মুন্নাকে জানালার ধারে বসিয়ে আমি রিয়েল স্টাডি করতাম। খুঁজে দেখলে সেই আঁকার খাতা এখনও পাওয়া যেতে পারে। দুপুর যেই হেলান দিত বিকেলের গায়ে মানে এই তিনটে সাড়ে তিনটে নাগাদ মুন্নার গলার হাতছানিতে আমি ঘরের দরজা খুলে বারান্দার পাঁচিলে এক পা তারপর শূন্যে এক লাফ দিয়ে বড়ো পাঁচিলে অন্য পা ছুঁয়েই জোড়া পায়ে ইট বাধানো রাস্তার ওপর লম্ফ দিয়ে পড়ে ‘চল’ বলে দৌড় লাগাতাম ব্যাঙার বাগানের দিকে। নিপাট ভালো শান্ত মেয়েটা আমার মতোত ডানপিটের পিছু পিছু ছুটে হাঁপিয়ে একশা হত।
top of page
SKU: SBGG
₹220.00 Regular Price
₹176.00Sale Price
No Reviews YetShare your thoughts.
Be the first to leave a review.
সম্পূর্ন ছবি দেখার জন্য বইয়ের ওপরে ক্লিক করুন
bottom of page