অনেকক্ষণ ধরে পেছনের বারান্দার ঘুলঘুলি থেকে দুটো পায়রা আদুরে গলায় নিজেদের মধ্যে কথা কইছিল। বক বকম, বক বকম.... ঘুর্র্র্...ঘুর্র্র্...। কত রকমের আওয়াজ। উজান বুঝতে পারছিল, ওদের এই কথাবার্তা ঝগড়া বা ক্রোধের অভিব্যক্তি নয়। পশুপাখিদের মধ্যে সাধারণত ক্রোধ বা উন্মত্ততা হয় কেবল কোনও এক নারীকে কেন্দ্র করে। কে তাকে অধিকার করবে, এই নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। উজানের মনে হল, এই পায়রা দুটি নিশ্চয়ই নিজেদের মধ্যে ভালোবাসা-বাসির কথা বলছে।
সময় কাটানোর জন্য সব থেকে ভালো উপায় হল ছবির অ্যালবাম দেখা। রানিদের ঘরে অ্যালবাম না থাকলেও একগাদা ফোটো টাঙানো রয়েছে দেয়ালে। উজান উঠে গিয়ে সেই সব ফোটোগুলো দেখতে থাকে।
রানি পালঙ্কের একটা খুঁট ধরে সরে দাঁড়িয়েছে। একদিকের বুকের ওপর থেকে আঁচল সরে গেছে তার। সেই উঁকি মারা বুকের ওপর উজানের চোখ আটকে যায়। কুচযুগ শোভিত মুক্তা হারে....। মুক্তা নয়, রানির গলায় একটা সোনার চেন ঝুলছিল। সেটা খুব নরম ভঙ্গীমায় রানির ওথলানো বুকের ওপর শুয়েছিল। উজান দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয় সেখান থেকে। তারপর ফের ঘুরে দাঁড়িয়ে দেয়ালে টাঙানো ফোটোগুলো দেখতে থাকে।
রানি কখন ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে, খেয়াল করেনি উজান। ওর ঘাড়ের ওপর রানির নিশ্বাসের উষ্ণতা টের পায় যখন, বুঝতে পারে, রানি ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। একটা ফোটোর দিকে আঙুল তুলে রানি জিজ্ঞেস করে, ‘বলো তো এরা কারা?’
উজানের তখন মনের মধ্যে অজস্র সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছিল। উজান কোনওরকমে ঢোঁক গিলে বলল, ‘বলতে পারব না। আমি কি এদের কাউকে চিনি না কি?’
‘ভালো করে চেয়ে দ্যাখো...’ বলে, রানি আর একটু কাছে সরে আসে উজানের। উজান ওর পিঠে স্তনের আলতো স্পর্শ অনুভব করে। নারী শরীরের তীব্র ঘ্রাণ। উজানের কানের লতি তপ্ত হয়ে ওঠে। ঘ্যাসঘ্যাসে গলায় উজান বলে, ‘এই ফ্রক পরা মেয়েটা কি তুমি? দেখে তো আমার তাই মনে হচ্ছে।’ উজান মনে মনে বুঝতে পারে, ঠিক এই সময় ও ঘুরে দাঁড়ালেই একেবারে রানির মুখোমুখি হয়ে পড়বে। কিন্তু উজান ভয় পায়। ঘুরে দাঁড়াতে সাহস হয় না।
ঠিক সেই সময় রানি আর একটু ঘন হয়ে দাঁড়ায়। উজান তার পিঠে স্তনের মৃদু চাপ অনুভব করে। ছবির ওপর রানি আঙুল তুলে বলে, ‘কী করে চিনলে তুমি?
উজান কোনওরকমে জড়ানো গলায় বলল, ‘তোমার থুতনির গড়নটা দেখে। ওটা তো সারাজীবন একই থেকে যায়।’
রানি ওই ভাবেই উজানের গায়ে গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আর ইনি আমার বাবা।’
‘তাই! তুমি তখন কত ছোট ছিলে! এখন বড় হয়ে অনেক পালটে গেছ। আরও সুন্দর হয়েছ দেখতে।’ এই বলে, উজান ঘুরে দাঁড়ালে রানির মুখোমুখি হয়। স্পর্শের আওতায় চলে আসে।
হাসলে রানির বাঁ গালে অল্প টোল পড়ে। উজান নিষ্পলক চেয়ে থাকে সেই আশ্চর্য টোল পড়া মুখের দিকে। সম্মোহিতের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। যেন সামনে ফনা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক নাগিনী। এক পা নড়বার ক্ষমতা নেই উজানের।
রানির সরে যাওয়া আঁচলের ফাঁক দিয়ে স্তনের আভাস আরও প্রকট হয়ে ফুটে উঠেছে। ঠোঁটময় ছড়িয়ে আছে শিউলি ফুলের বোঁটার মতো মেদুর কমলা হাসি। এক অদ্ভুত শিরশিরানি আবেশে উজানের শরীরের গ্রন্থিসকল ক্রমশ আলগা হতে থাকে। দুটি শরীরের মধ্যে দূরত্ব এখন বড়জোর এক হাত। কিংবা তারও কম। এখন ইচ্ছে করলেই উজান রানিকে ছুঁতে পারে। আশ্লেষে জড়িয়ে ধরতে পারে। চুম্বন করতে পারে। রানিরও কি তাই মনে হচ্ছিল! কিন্তু..... কে যেন উজানের হাত দুটো পিছ মোড়া করে বেঁধে রেখেছে। উজান নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকে। এতটুকু নড়া-চড়া করতে পারে না। প্রস্তরবৎ দাঁড়িয়ে থকে। যেন কোণারকের মন্দির গাত্রে খোদাই করা দুটি মূর্তি।
top of page
₹250.00 Regular Price
₹200.00Sale Price
No Reviews YetShare your thoughts.
Be the first to leave a review.
সম্পূর্ন ছবি দেখার জন্য বইয়ের ওপরে ক্লিক করুন
bottom of page