top of page

কুড়িটি ছোটোগল্পের সংকলন

 

 

"এখানে রাত যখন গভীর হয়, সূর্য না উঠলেও পাতলা আলোর অ্যাসিডে অন্ধকার গলে যেতে থাকে। অন্ধকারের যে চ্যাটচেটে ভাব আছে, সেটা সহজে ছাড়ে না, চারপাশ তেতে একটু একটু করে পুড়ে যেতে থাকলে তখন পূর্ণ গভীর রাত। সেই চ্যাটচেটে ভাবের মধ্যেই মানুষজন ঘুমোতে ঘুমোতে ক্ষুদ্র হয়ে যায়, যেন জেগে ওঠার ইচ্ছে তাদের নেই, প্রয়োজন নেই, বরং অন্ধকারের বাইরে তাদের হাত বা পা বা মাথা চলে গেলে অবচেতনের তীব্র বিরক্তিতে গাঢ়তর অন্ধকারের আশায় পাশ ফেরে। এখানে ভোরের পাখি নেই, অভ্যাসবশত এসে-পড়া দু-চারটে কাকের ডাকারও স্পৃহা নেই, শুধু জল আসে ছরছরিয়ে, ভোরের ধার্মিকতা নেই, কেন না এখানে ধর্মপ্রচারকরা বাস্তবিক অন্ধকারে কাজ করে, শ্রম-ধান্দা-ফিকিরের শেষে শরীর যখন অবসন্ন, বুকে পরাজয়, চোখে-মুখে জীবনযাপনের ক্লেদ, মানুষ সে-সময় ধর্ম খুব ভালো খায়, পাঁকাল মাছও ছুটে আসে ধর্মের মদির চারে।

এখানে ইঁদুররাই শুধু ভোর দ্যাখে। অসংখ্য ইঁদুর, বেড়ালের অধিক গতর তাদের, ভয়হীন ভ্রান্তিহীন চলনে রাস্তাপাট জুড়ে থাকা তন্দুরির টুকরো, মাংসের হাড়, ন্যাতানো বেগুনি, আলুর পিণ্ড, পাঁউরুটির মোড়ক, বোতলের ছিপি, পানমশালার পাউচ, ডেইলি লটারির কাগজ, নায়িকার শরীর, নষ্ট টেপের ফিতে অন্তহীন গর্তে টেনে নিয়ে যায়। গায়ে-মাখা সূর্যের তাপ বারবার গর্তে রেখে আসে উষ্ণ বসবাসের আশায়।

আজ আরও দুজন ভোর হতে দেখেছে।

ছেদিলালের তক্তপোশের ওপর চিৎ শুয়ে গান গাইছিল গুলে: ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।

দেশপ্রেমাত্মক অনুষ্ঠান বা দেশপ্রেমের প্রহসনে এইসব গান যে কুশলী অর্থময়তায় গায়, গুলের গলায় তা ছিল না, কারণ সুরের অভাব, শিক্ষার অভাব। তবে একটা মগ্নতা ছিল, যা এতদঞ্চলের পূর্ণ গভীর রাত ও তক্তপোশের নীচে জেগে-থাকা বেজির চোখে ভোরের আলোয় মাত্র দুটি লাইনে হাত-লাট্টুর মতো পাক খায়। গতকাল, দেশ-নাকি-ভেঙে-যাচ্ছে এরকম একটা হুঁশিয়ারিমূলক ও মেরামতিমূলক সভায় গানটা শুনেছে গুলে।

 

ফাঁড়ির ভবা সিপাই কাল চুষিয়ে বেজিকে টাকা দেয়নি। উল্টে ধমকি দিয়েছে, মার্ডার কেসে ফাঁসাবে। চোষা বা চোষানোটা ক্রাইম নয়, আইনের হাতে পড়ে না, এই কাজে বেজি মাঝে-মধ্যেই ঠকে, বিশেষ করে কাজটা যদি পুলিশের হয়। ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছে, কিন্তু কী করবে, ভালো কাজ কই? ভারত কী গো, গুলেদা?

আমাদের দেশ।

তালে ইন্ডিয়া?

একই হল।

মিস ইন্ডিয়া?

ওটা ভালো না। টনির বউ যেমন। মাই দেখায়, উরুত দেখায়।

ইন্ডিয়া ভালো?

ওরা তো বলে। মায়ের মতো।

এত ভালো?

ভালো, তবে...

তক্তপোশের নীচে বেজি গুলের থেমে যাওয়া কথার ভেতর সন্দেহ টের পায়। তবে কী, গুলেদা?

বেজি, তোর মাকে দেখতে ইচ্ছে করে?

বেজির মা হয়ত এখন পালবাবুর গুদাম ঝাড় দিয়ে ফিরছে। গুদামে ইঁদুরের গর্ত থেকে চাল টেনে বের করতে হয়। মা একবার আংটি পেয়েছিল গর্তে। বাবা বিশ্বাস করেনি। মা-র ডান হাতের তিনটে আঙুল ইঁদুরের পেটে গেছে। বাবা বিশ্বাস করেনি। বাবা বলে, সব পালবাবুর খেল! লুকোও কেনে? আংটি দেয়, শরীল খায়। বেজির মা কাঁকড়ার দাঁড়ার মতো দু-আঙুলওলা হাত নেড়ে বলে, বাজে কথা কোয়ো না। জিভ খসি যাবে। শঅরে চুল্লু ছাপ্লাই করিনি বলে যার-তার নামে বাজে কথা, ভগমান সবেনি। বেজির বাবার একটাই কথা, গাঁয়ের চার-পাঁচটা বউ কেরিয়ারি করে সুখে আছে। হাতে পয়সা এলে ভদ্দরলোকের মতো বাঁচা যায়। পয়সা এলে সরমান হয়। শহর তক্‌ গাড্ দে নে যাবে। কোনো ঝামেলি নেই। ফিরতেই হাতে হাতে পয়সা। বেজির বাবার দুঃখ, কত লোক তার বুদ্ধি নেয়, আর ঘরের মেয়েমানুষটা স্বামীকে গেরাহ্যি করে না।

গুলে নরম গলায় জিজ্ঞেস করে, মা-র কাছে যাবি, বেজি?

ভয় করে। সত্যিই ভয় করে বেজির। শিয়ালদা থেকে দু-ঘন্টা রেল। তারপর দুটো নদী। পথে যেখানে পাবে, খপ্‌ করে ধরবে পুলিশ। রিয়াজুলের বাপ বঁটি নিয়ে তেড়ে আসবে। আর, রিয়াজুলের লাশটা, পাথরে থেঁতলে দেওয়া মুখটা এখনও ঘুমের মধ্যে বেজিকে তাড়া করে।

 

গুলে গান ধরেছে: বলো বলো বলো সবে, শত বীণা বেণুরবে।

 

ধনপতির কথাপালা । মধুময় পাল

SKU: DPK-1
₹400.00 Regular Price
₹320.00Sale Price
  • Within Chandannagar : 20 rs
    Out of Chandannagar : 65 rs
    Out of West Bengal      : 85 rs

No Reviews YetShare your thoughts. Be the first to leave a review.

সম্পূর্ন ছবি দেখার জন্য বইয়ের ওপরে ক্লিক করুন

1111-removebg-preview.png

গল্পের বই উপহার পেতে কে না চায়!
এখনই Subscribe  করুন,
আর পেয়ে যান আপনার প্রথম বইটির মূদ্রিত মূল্যের ওপর ২৫% ছাড় 

Thanks for being our family!

  • Youtube
  • pngwing.com
  • 1111
  • tumblr
  • Instagram LOGO PNG2

+91 8240333741

Magic Seeds Books LLP

119 Abhay Patuli Lane, Shuksanatantala, Chandannagar 712136

Email us at: manikarnika.pub@gmail.com

For any other queries feel free to reach us at: 8240333741(Call/Whatsapp)

©2022 by Manikarnika Prakashani.

bottom of page