Search Results
200 results found for ""
Other Pages (91)
- শ্রাবণঋতু পার হয়ে যাও, ফেরিওয়ালা | শাশ্ব | Manikarnika.Pub
শ্রাবণঋতু পার হয়ে যাও, ফেরিওয়ালা। শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয় : গল্প প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ : অমিত মণ্ডল মূল্য : ₹ ৩০০ মণিকর্ণিকা প্রকাশনী যোগাযোগ (কল ও হোয়াটসএ্যাপ) : 8240333741 আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির একটি গল্প এখানে দেওয়া হল। রক্তমাংসগাছ খেলামাঠের একধারে এই গাছটা যে কবে কে লাগিয়েছিল, আজ আর কারো মনে নেই। পাড়ার ছেলের দল জন্ম থেকে দেখছে ও আছে তো আছেই। ও কি শুধু একা? এমন কত গাছ সেই অজানকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছে গ্রামের ইতস্তত, তাদের জন্মবৃত্তান্ত কেই বা জানে? এইটা একখানা পাতাভরা ঝাঁকড়া গাছ, সুঠাম বাদামি কাণ্ড, গায়ে বয়সের হিজিবিজি। ওর ডাল এক থেকে দুই, দুই থেকে চার, এইভাবে ভাগ হতে হতে হাজার হাজার প্রশাখা ছড়িয়ে গিয়েছে আকাশের নীচে। এই গাছে মধুফল হয়, তাই ওকে সবাই ‘মধুর’ বলে ডাকে। যুদ্ধ সেরে সমস্ত সৈন্য চলে গেছে মাঠ ছেড়ে, কেবল নড়তে ভুলে গেছে একজন সৈনিক, সে হল এই গাছ, এমনভাবে শূন্যমাঠের কোলে দাঁড়িয়ে থাকে মধুর। গ্রামের নাম ক্ষীরজমি, লোকে বলে এখানকার মাটি মাস-বিয়োনি। আজ বীজ ছড়াও, মাস পুরতে না পুরতেই দেখবে ফনফনিয়ে উঠেছে শস্যগাছ, তার মুখে ঝুমঝুম করছে পাকা ধান-গম, কিংবা সর্ষের ক্ষেত ভরে গেছে ফুটকি ফুটকি হলুদে। এমন মাটি পেয়ে মধুরও বছরে দুবার করে ভরে ওঠে ফলে। প্রথমে ধপধপে ফুল ধরে, এ-দেশ ও-দেশ থেকে আসে অজস্র ভ্রমর, মৌমাছির হাঁকডাক শোনা যায়, বোলতাদের ডানার কম্পনে তিরতির করে চারধার। দিন কতক যেতে না যেতে সাদা ফুলের নীচ থেকে একটু একটু করে জন্ম নেয় গোল ফল। বড়ো হতে হতে ফুলটাকে গ্রাস করে কেবল বুকের কাছে একটুখানি কেশর জাগিয়ে হাওয়ায় দুলতে থাকে হালকা গোলাপি রঙের মধুফল। তখন গাঁ-শুদ্ধ ছেলেবুড়োর উৎসব। ফল-ভরা গাছের ডালে ডালেই বেলা কেটে যায়। মধুরের চারধারে বহুদূর অবধি খোলা মাঠ। কোথাও কোনো আল নেই, সীমা টানা নেই। মাঠের সুদূরপ্রান্তে একটা মরা নদীর সোঁতা, গভীর ক্ষতের মতো চলে গেছে। বিকেল হলে বন্ধুদের নিয়ে সুকুল খেলতে আসে গাছের কাছে। আলো মরলে সবাই যখন ফিরে যায়, সুকুল একা গিয়ে দাঁড়ায় গাছতলায়। কেমন আছ মধুর? খুব ভালো। তুমি কেমন? ভালোই… উঁহু, গলাটা যেন কেমন কেমন ঠেকে… কী হয়েছে সত্যি করে বলো। একটু মনখারাপ। কেন? রোজ কত কিছু ঘটে বাড়িতে, ইস্কুলে, গ্রামে। চাঁদের গায়ে যেমন ছোপ ছোপ দাগ, তেমনই কোনো না কোনো কারণে সুকুলের আয়নার মতো মনে একটুখানি অন্ধকার ঠিক লেগে যায় রোজ। মানুষের মন একখানা বড়োসড়ো আরশি; শিশুদের আরশিখানা ঝকঝকে, এতটুকু ময়লা নেই, ভাঙাচোরা নেই কোত্থাও। সে যত বড়ো হয়, তত ধুলো পড়ে, মাকড়সার জাল টানা হয় এ-কোণ থেকে ও-কোণ। সেই জালে আটকা পড়ে আঘাত, অপমান, দুঃখ, শূন্যতা। সে কথা সুকুল যতটুকু টের পায় মধুরকে জানায়। মধুর চুপ করে শোনে। তারপর ডালপালা নাড়িয়ে একঝুড়ি বাতাস ঢেলে সুকুলকে স্নান করিয়ে দেয়। অশান্তি-উদ্বেগ ধুয়ে ঠান্ডা হয়ে পড়ে সুকুলের মন। ওর আঁজলায় ফুলের সময় ফুল, ফলের ঋতুতে ফল ভরে দেয় গাছ। দুই হাতে মধুরকে জড়িয়ে আদর করে সুকুল ফিরে যায়। ২ একদিন শেষ-দুপুরে মাঠে পৌঁছে সুকুল দেখল তখনও খেলুড়িরা কেউ আসেনি। পাশের গাঁ সহদেবপুরের কালীতলা মাঠে মেলা বসেছে, অনেকেই দুপুরের খাওয়া সেরে মা-বাবা-দাদা-দিদির সঙ্গে ওখানে গিয়েছে। এসে পড়বে একে একে। যাই হোক, এই সুযোগে ও একটুখানি বসতে গেল মধুরের ছায়ায়। কিন্তু কাছে গিয়েই বরফ হয়ে গেল সুকুলের শিরদাঁড়া। এ কী! মধুরের পুবদিকের একখানা বড়ো ডাল কাটা! কাটা ডালখানা আবার পড়ে আছে কাছেই, তার পাতাগুলো নুয়ে পড়েছে। ভয়, বিস্ময়, ও যাতনার একটা মিশ্রস্রোত নেমে গেল সুকুলের শরীর বেয়ে। তোমার একখানা হাত কে কাটল মধুর? পুবজমির মালিক। কেন? দেখছ না, ওদিকে বেড়া দিয়েছে। ওর জমিতে আমার পাতা ঝরে পড়লে নাকি নোংরা হবে, তাই। তা বলে… তা বলে… তোমার একখানা হাত কেটে দেবে? দিল তো। নিমেষের মধ্যে ঝড় উঠল সুকুলের মাথার অন্দরে - সেই হাওয়ার তাণ্ডব আর কমতেই চায় না। মনের আরশিতে চিড় ধরল একখানা, লম্বা চিড়, হয়তো বা জীবনের প্রথম চিড়। কাকচক্ষু জলের মতো আয়নায় ঝাঁপিয়ে নামল অন্ধকার। আর খেলা হল না সুকুলের। এলোমেলো পায়ে গোটা গ্রাম ঘুরে বাড়ি ফিরে এল ও। তখন ঝিমঝিম করে গোধূলি ছড়িয়ে পড়েছে আকাশময়। বনবাদাড়ে স্পষ্ট হচ্ছে কিটির কিটির পোকাডাক। বড়ো করুণ ও ক্ষণজন্মা দেখাচ্ছে মানুষের পৃথিবী। মঙ্গলাদিঘির পাড়ে বসে অনেকগুলো খাপলা এক এক করে জলে ফেলল সুকুল। গুব গুব আওয়াজগুলো বড্ড জোর মনে হচ্ছিল নির্জন দিঘি-অঞ্চলে। জলের পাড়ের ঝোপঝাড়ে আচমকাই কটা কাশফুল দেখল সুকুল। ভাবল একখানা তুলে ডাঁটা চিবোয়, এতে যদি মনখারাপটা একটু কমে। কিন্তু নাহ। উঠে গিয়ে কাশফুলটাকে আঘাত করতে আর ইচ্ছে করল না। ওখান থেকে উঠে বাড়ি ফিরে এল সুকুল। ঘরে ঢুকেই বাবাকে বলল, মধুরের ডাল কে কেটেছে তুমি জানো? জানি। কে? ওই তো আমাদের বঙ্কুখুড়ো। কেন? জমি ভাগ হচ্ছে যে। ও মাঠ আর থাকবে না। পুবধারের অনেকখানি বঙ্কুখুড়ো কিনে ঘিরে রাখল। বোধহয় চাষবাস করবে, একটা ঘরও তুলবে। ওর মধ্যে শুকনো পাতা ডালপালা পড়লে অসুবিধা, পরিষ্কার করার বেজায় ঝক্কি, বাদলা নামলে আবার পচে-ধ্বসে পা বসে যাবে, গন্ধ ছড়াবে। তাই কেটে দিয়েছে। ভালোই করেছে। ভালো করেছে! কী অনায়াসে কথাগুলো বলে দিল বাবা! লোকটার মুখে এতটুকু দুঃখ নেই! দ্যাখো কেমন গামছা ঘুরিয়ে দিব্যি হাওয়া খাচ্ছে! জন্মাবধি দেখে আসা মানুষটাকে বড্ড অচেনা লাগল সুকুলের। একটা জীবন্ত গাছের ডাল, পাতা-ভরা ডাল, কেটে শুইয়ে দিল মাটিতে, সেটা কিছু না! তাহলে ‘গাছের প্রাণ আছে, গাছের প্রাণ আছে’ বলে বইতে এত লেখে কেন? যে প্রাণের কানাকড়ি মূল্য নেই, তার কথা এত ফলাও করে লেখাই বা কেন? রাগতস্বরে ও বলল - ডাল কাটলে মধুরের লাগে না বুঝি? অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাল বাবা। কেমন হাঁদা রে তুই, গাছের আবার লাগে নাকি? তবে, কার লাগে? শুধু মানুষ আর পশুপাখির। কে বলেছে? গাছের প্রাণ আছে, আমি বইয়ে পড়েছি। গাছের প্রাণ-টান ওই নামেই আছে। ওসব পুঁথির বিদ্যে। বেদনা টের পেতে গেলে রক্ত লাগে। মাংস লাগে। ডালপালায় বেদনা জাগে না। কেন? কেন আবার কী, এটাই নিয়ম। ডালপালা যেমন ভাগ হতে পারে, দিনে দিনে বিছিয়ে যেতে পারে, আমাদের হাত-পা কি পারে? জন্ম থেকে ওই দুটো হাত আর দুটো পা। ব্যস। ওরা আর বাড়তে পারে না। তেমনি আমরা যেমন ব্যথা-বেদনা টের পাই, গাছেরা পারে না। যার যেটা ধর্ম। বীজ থেকে চারা, চারা বেড়ে বেড়ে ছোটো গাছ, তার শাখা থেকে প্রশাখা - গাছ শুধু বাড়ে। আর… আর? আর মানুষ তাকে একটা মাপ দেয়। মানে কেটে দেয়, তাই তো? দরকার মতো কখনও কাটে, কখনও আবার ছাঁটে। আর কথা বাড়াল না বাবা। মানুষ যে একটা খুনি প্রজাতি এ কথাটা মাথায় নিয়ে শুতে গেল সুকুল। কিন্তু ঘুম এল না। আধো-তন্দ্রার মতো ঘোরে কত কী ভাবতে আর দেখতে লাগল ও। একবার দেখল মধুরের গোটা গা জড়িয়ে ফেলেছে ধূসর মাকড়সার জাল, আরেকবার দেখল একটা রোগা লোক গান গাইতে গাইতে একা একা পথ চলেছে, তাকে ঘিরে সকাল হচ্ছে, দুপুর পড়ছে, আস্তে আস্তে সূর্য ডুবছে, ডুবতে ডুবতে যেই না সূর্যের শেষ রশ্মিটা পড়েছে লোকটার শিরে, অমনি সে বদলে গেল! এখন সে একটা পাতাভরা ডাল - মধুরের সেই কাটা ডাল - শুধু তার গলার কাছে জমাট রক্ত লাগা! এমন কত কিছু দেখতে দেখতে ভয়ে সিঁটিয়ে গেল সুকুল। ও শুনেছে স্বপ্নে রক্ত দেখলে নাকি পরদিন সকালে জেগেই একটা ভালো কাজ করতে হয়, নইলে সংসারে রক্তপাত অবশ্যম্ভাবী। ভোর না হতেই সুকুল গিয়ে দাঁড়াল মধুরের কাছে। মধুর। বলো। তোমার কাটা জায়গাটায় খুব ব্যথা? উত্তর করল না মধুর। কষ্টের কথা গাছ কি কখনও বলতে পারে? সুকুল বলল, আমার একটা হাত তুমি নাও। এ আবার কেমন কথা? ঠিক কথা। তা আবার হয় নাকি? কেন হবে না? বাবা বলেছে রক্তমাংস না হলে ব্যথা-বেদনা জাগে না। মানুষ বোঝে না। কেন? বুঝতে বুঝতে, অনুভব করতে করতে মানুষের এগোনোর কথা। মোহ থেকে, মিথ্যে থেকে সত্যের দিকে এগোয়। কিন্তু আজ সত্য থেকে বহুদূরে ওদের বাস। এত রক্তে ভাসলে, এত লালসায় পুড়লে, সত্য কাছাকাছি আসবে কেমন করে? মানুষ আর এগোচ্ছে না সুকুল, ওরা ডুবছে। কেবল ডুবছে। আর পুড়ছে। এমনটা কেন? কারণ মানুষেরই একমাত্র মাপের ধারণা আছে। আর কারো নেই। যার মধ্যে একবার মাপবোধ আর হিসেব-নিকেশ ঢুকে পড়ে, সে কেবল ছোটো করতে জানে। এই অসুখ থেকে তার মুক্তি নেই। মাপ তো বড়োও করা যায়? মাপ টেনে বড়ো করতে হলে বড়োর ধারণা থাকতে হবে। ‘আমি বড়ো করব, বড়ো হব’, এই ধারণা, এই আকাঙ্ক্ষা থাকতে হবে। আমাকে যদি তুমি না-ই চেনো, তাহলে আমার ফল খাওয়ার ইচ্ছে তোমার জাগবে কেন সুকুল? ঠিক তেমনি। ‘বড়ো’ যে আসলে কি, মানুষ আর তা জানেই না। এমনটা কিন্তু সবসময় ছিল না। ছোট্ট কুঠুরি থেকে বেরোবে বলে একদিন কতরকমের কত লড়াই করেছে মানুষ। কতভাবে করেছে, কত পথে করেছে। আর আজ… ধ্যানমৌন সন্ন্যাসীর মতো চুপটি করে আকাশে তাকায় মধুর। তার ওপর দিয়ে পাখি ওড়ে। কোত্থেকে একটা চিল এসে ভেসে থাকে বহুক্ষণ। ভাসতে ভাসতে পাক খায়। সুকুল একটু একটু করে মধুরের কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করে। এতটুকুন বয়সে এমন গভীর সব কথা ও বুঝবে কেমন করে, তবু শিশুদের মধ্যেকার যে আশ্চর্য সরলতা, তার সঙ্গে মানুষের ওই বড়ো হওয়ার সংগ্রামের খুব ভাব। সুকুল আবছাভাবে কিছু কিছু বোঝে, মধুরের ঔদাসিন্য ওকেও গ্রস্ত করে ফেলে। খানিক বাদে ধীরকন্ঠে সুকুল বলে - তাহলে আমার হাত তুমি নেবে না? না। আমি তোমার একখানা হাত কেটে নিয়ে নিলে, যে আমার ডাল কাটল তার সঙ্গে ফারাকটা রইল কোথায়? তার মতো আমিও যে খুনি হয়ে যাব। দুঃখু কোরো না সুকুল, যেইমাত্র তুমি হাত দিতে চাইলে, অমনি আমি দেখতে পেলাম তোমার বুকের ভেতর একখানা মেঘ-থইথই আকাশ রয়েছে, অপরের কষ্ট দেখে যে আকাশে রং লাগে গাঢ় বেদনার, সেই রঙের পাথারে হাহাকার করে কাঁদে মেঘের দল, এতেই আমার সব ব্যথা ধুয়ে গেল। ৩ দুদিন পর খেলতে গিয়ে সুকুল দেখল মধুরের দক্ষিণদিকের একটা ডাল কাটা। ওদিকের জমিতেও বেড়া উঠেছে। ওদিকেও ডাল গেলে মানুষের অসুবিধা। বুকে হাজারটা ছুরি বসল সুকুলের। মধুর যেন শুকিয়ে গেছে। যদিও এখনও দিনান্তে ফুল-ফল-বাতাস দেয়, ঠিক ফিরিয়ে দেয় সুকুলের আদর, কিন্তু যন্ত্রণা বড়ো স্থবির করে ফেলেছে ওকে। এই যন্ত্রণা থেকে মধুরকে কেমন করে মুক্তি দেওয়া যায় নিরন্তর সে কথা ভাবতে ভাবতে প্রার্থনা শুরু করল সুকুল। নীল আকাশের দিকে চেয়ে অচিন কোনো এক দেবতাকে ডাকতে লাগল দিবারাত্রি। ফিসফিস করে বলতে লাগল, এ পথ দিয়ে যে ই যাও না কেন, একটিবার সাড়া দাও। কত পাখি পেরিয়ে গেল, কত মেঘ এসে খেলা করে গেল, কত বৃষ্টির দানা আর রোদের রশ্মি আকাশ থেকে নেমে এল তলাকার দেশে, তবু তপস্যার ফল পায় না সুকুল। অবশেষে, একটা ছোট্ট ছেলে এত ডাকছে, দিনে খাচ্ছে না, রাতে ঘুমোচ্ছে না দেখে, একসময় সাড়া দিলেন গোটা আকাশের যিনি দেবতা, তিনি - বলো সুকুল। তুমি কি আকাশপারে থাকো? হ্যাঁ। তুমি কি নীলমানুষ? আমি মানুষ নই, দেবতা। তোমার রক্তমাংস নেই তো? না। তবে? আমার শরীরে শুধু মেঘ আর রোদ্দুর। কখনও বা ঝড়-বিদ্যুৎ, বৃষ্টিজল। আর এই সমস্তকে একসঙ্গে ধরে রেখেছে আমার ধ্যান। আমার একাগ্রতা। তাহলে তুমি বুঝতে পারবে। কী বুঝব? মধুরের ডাল একটা একটা করে কেটে ফেলছে ওরা। ওরা কারা? গাঁয়ের লোক। মানে মানুষ। আচ্ছা। এইভাবে তো একদিন মরে যাবে মধুর। গোটাগুটি উধাও হয়ে যাবে। যাবে তো। এমন করে কত গাছ সরে নেড়া হয়ে গেল মাটি, তারপর মাটি থেকে ঝুরঝুরে বালি। সেখানে কোমল কোনো গাছ হয় না। কেবল কাঁটাঝোপ জন্মায়। তুমি তো সবই জানো। আমার চেয়ে ঢের বেশি তোমার জানা। তাহলে কিছু একটা করে আমার মধুরকে বাঁচাও। আমাকে কী করতে বলো? তুমি মধুরের গায়ে একটু রক্তমাংস দাও। রক্তমাংস? হ্যাঁ। তাহলে লোকে ভাববে ও–ও ব্যথা পায়। আর ডাল কাটবে না। কিন্তু আরেক রক্তমাংসের শরীর কষ্ট পাবে ভেবে তাকে যে ব্যথা দেয় না মানুষ, তেমন তো নয়। তবে? রক্তমাংসের যন্ত্রণাকে স্বীকার করে নয়, রক্তমাংসের প্রতিরোধের ভয়ে চট করে তাকে আঘাত করে না মানুষ। কিন্তু অধিক শক্তিশালী মানুষ আরেক কমজোরি মানুষকে মারছে, এ কি তুমি দ্যাখোনি? চুপ করে রইল সুকুল। দেখেছে ও। ফসল তোলার সময়, মাছ ধরে ভাগ-বাটোয়ারার কালে, তাঁতির ঘরে কাপড়-বেচা টাকা এলে, চোখের পলকে বদলে বদলে যায় মানুষের রূপ। তখন আর কেউ খুড়ো ভাই মা মাসি নয়, কেউ দাদনদার, কেউ মহাজন, কেউ মোড়ল। কেউ বা ডাকাত। কী রোয়াব তাদের! কিন্তু সুকুল ছোটো ছেলে, আর কোনো বুদ্ধি এল না ওর। ও বলল - সে যা হয় হোক। তুমি মধুরকে একটু রক্তমাংস দাও। যা বলছ ভেবে বলছ তো? হ্যাঁ। একবার দিলে আর কিন্তু ফিরিয়ে নিতে পারব না। আমি ভেবেই বলছি, তুমি দাও দেবতা। মধুরকে বাঁচাও। আচ্ছা। তবে তাই হোক। ৪ পরের দিন গোটা ক্ষীরজমি গ্রাম ভেঙে পড়ল মধুরের চারধারে। সুকুল গিয়ে দেখল - গাছের শাখায় শাখায় ফুটে উঠেছে শিরা-উপশিরা, তাদের ভেতর দিয়ে দপদপিয়ে রক্ত চলছে পাতার অগ্রবিন্দু অবধি! রক্তের স্পন্দনে তিরতির করে কাঁপছে পাতারা। আগের মতো আর ঠান্ডা নয় ওরা, সামান্য উষ্ণতা জন্মেছে সবুজ শরীরে। আর কাটা ডালগুলোর মুখে রক্ত শুকোনো দাগ। আনন্দে শিউরে উঠল সুকুলের মন। এইবারে ও নিশ্চিন্ত, আর মধুরের ডাল কাটবে না গাঁয়ের বজ্জাত লোকজন। হলও তাই। অশৈলি কোনো কান্ড ঘটছে ভেবে মধুরের আশপাশে যাওয়া একেবারে বন্ধ করে দিল গাঁয়ের মানুষ। আর ও-গাছ নিয়ে হরেক গল্প পাক খেতে লাগল মুখে মুখে। কেউ কেউ মধুরকে মেরে ফেলার পরামর্শ দিলেও উল্টোদিক থেকে হা হা করে উঠল আরেকদল। এমন গাছকে মারবার চেষ্টা করলে যদি কোনো কূট অভিশাপে গোটা গাঁ উজাড় হয়ে যায় তখন! মানুষের হুড়োহুড়ি থামলে, একদিন খেলা সেরে সন্ধের মুখে আগের মতো আপন গিয়ে দাঁড়াল মধুরের কাছে। ও মধুর… বলো। জানো, এখন আমি ভীষণ খুশি। কেন? এখন তুমি রক্তমাংসবান, আর কেউ কাটবে না তোমাকে। হুম। তুমি খুশি তো? ওই আর কী। এ আবার কেমন কথা? তোমার গলাটা ভারী ভারী লাগছে কেন মধুর? ভারী কোথায় দেখলে? কটা দিন কথা হয়নি তো, তাই অমন লাগছে। আমি ঠিক আছি। মধুর যাই বলুক, পুরোনো সঙ্গীকে ঠিক চিনতে পারল না সুকুল। কেমন যেন বদলে গেছে ও - একটু ভারিক্কী, একটু দূরের। তবু দুই হাতের বেড়ে ও অনেকক্ষণ ধরে আদর করল গাছকে। ওর বুকের মধ্যে চারিয়ে গেল মধুরের শিরা-ধমনীর দিপদিপ। তবে আজ আর সুকুলের আঁজলা ফুলে ভরে দিল না গাছ। কেন, কে জানে! ৫ সুকুল বেশ বুঝতে পারে একটু একটু করে বদলে গেছে মধুর। আজকাল আর সাড়া দেয় না তেমন। ওর ডালে আগের মতোই ফুল হয়, বরং তার চেয়ে বেশিই হয়। ফলগুলোও পুরুষ্টু হয় খুব। দূর থেকে দেখলেও চোখে লাগে। সুকুল জানে, ভালো কথায় একে বলে ‘আকর্ষণ করা’। কিন্তু সেই আশ্রয়ী বাতাস আর সুকুলকে দেয় না কেউ। কেন হল এমনটা? ও-ই তো দেবতাকে বলে রক্তমাংস এনে দিল মধুরের শরীরে। এখন কেন শুধু দূরের জনকেই আকর্ষণ করে মধুর আর কাছের জন, আপনার মানুষকে অবহেলা করে ঠেলে দেয় দূরে? আবার ঘুম হারিয়ে গেল সুকুলের। খাওয়া গেল ঘুচে। ও ডাকতে লাগল দেবতাকে। সুকুলের কাতর আহ্বানে আগের মতোই সাড়া দিলেন আকাশপারের ঈশ্বর - বলো সুকুল। মধুর বদলে গেল কেন? রক্তমাংস পেল বলে। তাহলে দিলে কেন? দেওয়ার আগে আমি তো তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম সুকুল। হ্যাঁ… তা করেছিল… তবে রক্তমাংস গায়ে এলে যে মধুর বদলে যাবে, তা তো বলোনি.. ও বদলে গেল কেন? রক্তমাংসের মধ্যে নিহিত রয়েছে প্রভুত রহস্য। কী কী রহস্য? লোভ। দূরত্ববোধ। অহং। অপ্রাপ্তির আক্ষেপ। যেখানে যাবে তাকেই দূষিত করবে এই রক্তমাংস। আকুল হয়ে উঠল সুকুলের মন। এ কী হল? এতবড়ো ভুলটা ও করল কেমন করে? কিন্তু রক্তমাংস তো ওরও আছে, ও তো মধুরকে দূরের ভাবে না। স্থির হয়ে কিচ্ছুটি ভাবতে পারল না সুকুল। তুমি ওর রক্তমাংস ফিরিয়ে নাও। তা আর হয় না। কেন? রক্তমাংস দেওয়া যায়, ফেরানো যায় না। কেন? রক্তমাংসের মধ্যে একটুখানি করে মিশে যায় আমার আয়ু। ওর ওপর আর জোর খাটে না আমার। তাহলে উপায়? নেই। এই বলে ফিরে গেলেন মেঘ-বৃষ্টি-বজ্র-বিদ্যুৎ দিয়ে গড়া দেবতা। তার হৃদয়ে একটা ঘাসফুলের মতো ফুটে রইল বন্ধু-বিচ্ছেদের সাক্ষী হওয়ার কষ্ট। ৬ একদণ্ড পড়ায় মন বসে না সুকুলের। পাঠশালা থেকে অভিযোগ আসে। খেলায় ডাকতে এসে বন্ধুরা ফিরে যায়। ঋতু বদলায়। মধুরের ডালে ফল ধরে। পাকা ফলের সুগন্ধ ছড়ায়, এই সৌরভ হেথা-হোথা ছড়িয়ে দেয় হাওয়া। আস্তে আস্তে ভয় ভুলে ফিরে আসে গ্রামবাসী, গাছ ছেঁকে ধরে ছেলেবুড়োর দল। লোকমুখে সুকুল খবর পায় ডাল থেকে দুজনকে আছড়ে ফেলেছে মধুর। কারো হাত কারো বা পা গেছে ভেঙে। গাঁয়ের মানুষজন বলাবলি করে - নিশ্চয়ই কোনো অপদেবতা ভর করেছে মধুরের ওপর। ওই গাছটাকেই শেষ করে দিতে হবে এবার। শেকড় থেকে উপড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। গোটা ক্ষীরজমি ডুবে যায় হত্যাকল্পনায়। ষড় চলে। সন্ধে হতে না হতে ভিড় জমে যায় আটচালায়। শেকড় কাটতে গেলে কী কীভাবে বাধা দিতে পারে ওই অনাসৃষ্টি গাছ, সেই নিয়ে জল্পনা হয়। আর এই সমস্ত কিছু থেকে একটু একটু করে উঠে যায় সুকুলের মন। একটা ঘুড়ি উড়ছিল বহুদিন, আজ সে ছিঁড়ে গেছে। লম্বা সুতো নিয়ে সে ভাসছে। ভেসেই চলেছে। হঠাৎ করেই অনেক বড়ো হয়ে যায় সুকুল। ওই ছিন্ন রশি, ঠিকানাহীন ঘুড়ি ওর পরিণত মন। আবার একদিন দেবতাকে ডাকল সুকুল। বলো কী বলতে চাও। আমার প্রার্থনা মঞ্জুর করো। এই শেষবার। যা চাইবে, ভেবে চাইছ তো? হ্যাঁ। খুব ভেবেছি। আগের বারের মতো কষ্ট পাবে না তো? পাবো না। বেশ, তবে বলো… এই গ্রাম থেকে অনেক দূরে, যেখানে মাঠের পরে মাঠের পরে মাঠ, আমাকে নিয়ে চলো, আর সেইখানে একটা গাছ করে দাও। মধুফল গাছ। রক্তমাংস দেব সেই গাছে? না। একটুও না। কিছুতেই না। আমাকে শুধু শিকড় দিও। মাইলের পর মাইল শিকড়। ফসলখেতের তলা দিয়ে, মানুষের বাড়ির নীচ দিয়ে, নদনদীর তল ঘেঁষে, আমি যেন ছড়িয়ে পড়ি। আচ্ছা। তাই হোক - বলে চলে গেলেন দেবতা। পরদিন সুকুলকে কোত্থাও খুঁজে পেল না কেউ। ৭ ওদিকে পৃথিবীর প্রত্যন্ত এক মাঠে জন্ম নিল একখানা বিরাট মধুফল গাছ। কাছে আসবার মতো একটি মানুষও নেই সেই নির্মক্ষিক স্থানে। নতুন গাছকে ঘিরে থাকে প্রজাপতি, ভ্রমর, মথ, শুঁয়োপোকা, পতঙ্গের দল। আর কাছে-দূরের দেশ থেকে পাখি আসে, পাখি যায়। নিত্যদিন পাখিরা আসে… পাখিরা ফিরে যায়…
- Our Catalogue | Manikarnika.Pub
পুস্তক তালিকা । মণিকর্ণিকা প্রকাশনী 2022 (June) নিঃশব্দ পাহাড় (২ য় খণ্ড) শুভদীপ বড়ুয়া নতুন জামানায় তার গায়ে ফুটে ওঠে রক্তাভ ছোপ- আফঘানিস্তানের নতুন পতাকা! একবার আফঘানিস্তান ত্যাগ করেও আবার ফিরে আসে স্যাম। মাহিল তাকে ডাকছে। মার্কিনি চর সন্দেহে গ্রেপ্তার হয় স্যাম। বহু চেষ্টার পর সে পালায়। কিন্তু তারপর? তিন খণ্ডে সমাপ্য এই সুদীর্ঘ উপন্যাসের প্রতিটি খণ্ডই স্বতন্ত্র, আশ্চর্য, ও অদ্বিতীয়। ₹ ১৮০ ভরতরাজার দুটুকরো দেশ পরিতোষ সরকার বারবার ভাগ হয় ভূখণ্ড। তার প্রাণ নেই। কিন্তু যারা পরিকল্পনা করে এই বাটোয়ারার তারা খেয়াল করে না একবার ভূভাগ হলেই সহস্র টুকরোয় ভেঙে যায় মানুষ। সেই কোন কাল থেকেই একথা বেমালুম ভুলে থাকছে বিভেদের কাণ্ডারিরা। এই বিস্মৃতির শিকার হচ্ছে ভরত সুবল গৌরী লক্ষ্মী মালতি। ₹ ২৫০ নৃমুণ্ডের মীমাংসা রাজা সরকার আজ অনেকদিন পর সেই অনুভূতিটা যেন ফিরে এসেছে। ভাটার টানে শীর্ণ আদিগঙ্গার জায়গায় কখন যেন ভেসে উঠেছে অল্পবয়সের দেখা মেঘনা। সেদিন কেন জানি তার মনে হচ্ছিল পৃথিবীর আদিকথাগুলো যেমন নদীমাতৃক, তেমন পৃথিবীর আদিকথার মানুষগুলোও নদীমাতৃক। একদিন নদীছাড়া মানুষের তেমন কিছুই ছিল না। আজ কি নদীছাড়া মানুষের তেমন কিছু হয়েছে! হলেও নদীমাতৃকার ওম থেকে বেরিয়ে সে আজও নিঃশ্বাস নিতে পারে না। ঘ্রাণে পুতিগন্ধের সঙ্গে রক্তগন্ধ, বারুদ্গন্ধ তাকে অধঃপতনেরই ইশারা দেয়। সকল সৌন্দর্য হারানো নিরুপায় কিছুক্ষণের জন্য মাত্র এই জীবন তার— নদীর কাছেই করুণা ভিক্ষে করে যেন বারবার।’ ₹ ৬৫০ তুমি থাকো সিন্ধুপারে অভিজিৎ চৌধুরী অবাক হয়ে কবিকে দেখছেন ওকাম্পো। কবি তাঁর পিতৃসম। বয়স তেষট্টি। ওকাম্পো ৪০ -৪১। সদ্য ডিভোর্স হয়েছে তাঁর। খানিকটা একা। কপালে বয়সের ভ্রূকুঞ্চন কবির। তবুও সুন্দর। দুজনের ভাষায় জড়তা। গান হতে পারে সংযোগের ভাষা। ইউরোপ জুড়ে বক্তৃতা দিতে দিতে ক্লান্ত রবীন্দ্রনাথ। গান নেই, কবিতাও নেই। একদিন ওকাম্পো এরকমটাও বললেন- ‘ইউর কম্পোজিশন ইজ টিডিয়াস।’ রাগ করলেন রবীন্দ্রনাথ! না। ফিরে এল চব্বিশ বছর বয়সের সেই সাহিত্য-সঙ্গী, নতুন বউঠান। রবি, তোমার গলাটা বড্ডো কর্কশ। কতো না প্রয়াস যুবক রবির- নতুন বউঠান তাঁকে কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন। শেষ রাতে কবি দেখতে পেলেন, ওকাম্পো সারা রাত তাঁর ঘরের বাইরে জেগে কাটিয়েছেন, শুনেছেন গান। জয় কি হল বিজয়ার কাছে! নিজের আরেক পরিচয়ের দরজা খুলে দিলেন ওকাম্পো। চিত্রকর রবীন্দ্রনাথ। নিছক লেখার সংশোধন আর কাটাকুটি থেকে জন্ম নিচ্ছে তাঁর ছবি। অসম বয়সের এ এক অনন্য প্রণয়-কাহিনি। যেখানে স্বপ্নের বপন আছে, শেষ নেই। সিন্ধুপারে রয়ে গেল প্রেমের সেই ভাস্বর মুহূর্তগুলি- একান্ত দুজনের কাছেই। ₹ ৩০০ বাঘমামার ভ্রমণ সুদেষ্ণা মৈত্র বাঘমামার ভ্রমণের ওপর একটি শিশুপাঠ্য উপন্যাস। ₹ ১৮০ (পক্ষীরাজ প্রকাশনী) চিঠি দিয়ো লাল তারা শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় দুচোখে সমুদ্র চষার স্বপ্ন নিয়ে চুপিচুপি বাড়ি ছেড়ে চলে যায় বিজন। বহু বছর পর এক বিশেষ কারণে ফিরে এসে দ্যাখে তার দাদার ছেলে রুকু বড়ো সুন্দর হয়েছে। বিজনকে বড্ড ভালোবেসে ফেলে রুকু। আর অমনি আশ্চর্য কত কিছু ঘটতে থাকে ওদের জীবনে। কোন জাদুবলে সমুদ্রের মতোই অপার হয়ে যায় রোজকার বেঁচে থাকবার আনন্দ। কিন্তু এত আনন্দ এত ভালোবাসা তো সহ্য করে না সংসার। ক্রমাগত ভাঙনেই তার আনন্দ। পরিবারে জন্ম নেয় তীব্র টানাপোড়েন। বিজু কি তাহলে চলে যাবে? আর রুকু, সে-ই বা কেমন করে থাকবে তার কাকুমণিকে ছাড়া? বড়ো হওয়ার পথে কোত্থেকে শক্তি পাবে সে? ₹ ২৫০ এক পুঁচকে কালো মাছের গল্প মূল কাহিনি : সামাদ বেহরাঙ্গী অনুবাদ : সৈকত ভট্টাচার্য সামাদ বেহরাঙ্গী ছিলেন ইরান দেশের ‘উদয়ন পণ্ডিত’। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে এমন এক ‘হীরকরাজার দেশ’ বোধহয় জেগে উঠেছিল বাস্তবের মাটিতে। এবং ছবির পর্দার রাজার চেয়ে বাস্তবের রাজার ক্ষমতা সচরাচর অনেক বেশিই হয়। আর তাই উদয়ন পণ্ডিতদের মৃত্যু হয় বারবার। যদিও এই মৃত্যু অসংখ্য মানুষের মধ্যে একজনকে হলেও নাড়া দিয়ে যায়, আর সে-ই ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে আগামীর উদয়ন পণ্ডিত। ₹ ২০০ গল্প ধনপতির কথাপালা মধুময় পাল কুড়িটি গল্পের এই সংকলনে পাঠক অবগাহন করবেন এক আত্মযাত্রাপ্রবাহে; যা তিনি দেখছেন চারধারে, যেসব সংঘর্ষ বাস্তবে পরিণত করে তুলছে তাকে, সেই সমস্তেরই অনুপুঙ্খ ছবি গড়ে উঠেছে গল্পে গল্পে এবং জড়িত চরিত্রদের ঘিরে কখনও স্পষ্ট কখনও বা আবছা কায়ায় চালচিত্র হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে কম্প্রমান এক কাল; তার স্পর্শ বিনা মানুষ বদলাতে পারে না। ₹ ৪০০ আয়নাতন্ত্র ঋতম চক্রবর্তী চুয়াল্লিশটি ছোটোগল্পের সংকলন। ₹ ৩০০ ঢাক বাদ্য, ঢাকই অস্ত্র পরিতোষ সরকার মানুষ বড়ো, নাকি ধর্ম? মানুষের সঙ্গে মানুষের আত্মিক সম্পর্ক বড়ো হবে, নাকি ভেদাভেদের সম্পর্ক? রাজনীতি মানুষের কল্যাণধর্মী হবে, নাকি অকল্যাণধর্মী হবে? দেশের কোটি কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করাই দেশ পরিচালকদের কর্তব্য হবে, নাকি দেশের ধনীদের আরো ধনী বানানোই একমাত্র কর্তব্য হবে? দেশ, সমাজ ও রাজনীতি থেকে দুর্নীতি, অপরাধ দূর করা হবে, নাকি সেই অপরাধ, দুর্নীতিকেই লালন পালন করা হবে?— বর্তমানে দেশের বৃহত্তর অংশের মানুষের মনের ভেতরকার সামগ্রিক এইসব ভাবনাচিন্তা এবং বহু প্রশ্নই— এই বইয়ের সমস্ত গল্পগুলোয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ₹ ৩০০ ছোটোদের জন্য (পক্ষীরাজ প্রকাশনী- গল্প)... চলো যাই লঞ্জেসের দেশে সুদেষ্ণা মৈত্র আটটি ছোট গল্পের সংকলন ₹ ১৮০ বিন্তির গল্প সুদেষ্ণা মৈত্র দশটি ছোট গল্পের সংকলন ₹ ১৮০ আকুলপুরের পথ বাসুদেব মালাকর ভিন্ন স্বাদের দশটি ছোটোগল্পের সংকলন। ₹ ২২০ নন-ফিকশন্ নমো তস্স কৌশিক সরকার বারানসীতে যশ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলেন। এমনিতেই সম্পন্ন পরিবার নিয়ে আলোচনা হয়, তার উপর হঠাৎ সন্ন্যাস গ্রহণ সকলকে কৌতূহলী করে তুলল। দাসদাসীদের মাধ্যমে প্রায় প্রত্যেক গৃহে যশ ও তথাগতকে নিয়ে আলোচনা শুরু হল। বারানসীর মানুষের ধারণা হল যে, ঋষিপত্তনে কে এক শ্রমণ গৌতম এসেছে, সে কী এক জাদু করে যশকে বশীভূত করেছে। ₹ ৩৫০ বুদ্ধজীবনকথা… ছায়াতরুগাথা ঋভু চৌধুরী বুদ্ধজীবনে তাৎপর্যময়ী বিশেষ কজন নারী আর ছায়া দেওয়া মহাপ্রাণ গাছেদের কথা নিয়ে এই বই। মূল তথ্যসমূহকে কেন্দ্র করে প্রায় পুরোটাই লেখক-কল্পনা। প্রথম গল্পে রয়েছে যে শালগাছের গায়ে হেলান দিয়ে পূর্ণগর্ভা মায়াদেবী জন্ম দিয়েছিলেন ভগবান বুদ্ধের সেই মহাবৃক্ষের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা বুদ্ধজন্মের গাথা। একেবারে শেষ গল্পে আবার ফিরে আসে গাছেদের গুঞ্জন। যে দুটি শালগাছের নীচে বুদ্ধদেব ছেড়ে গেলেন তাঁর নশ্বর দেহ, সেই গাছেরা প্রণাম রাখছে মহাজাতকের পায়ে। ফিরে দেখছে বুদ্ধজীবন। বাকি দুটো গল্পে রইলেন সুজাতা আর আম্রপালি¾ তাদের একাকীত্ব, ধুলোমাটির সংসার, রাজকীয় সংগ্রাম, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব, বুদ্ধপদের অভিলাষ নিয়ে। একা একা কথার ভেতর। ₹ ৩০০ ব্যাক্তিগত গদ্য পথ দেখাবে সূর্যোদয়ের ঘ্রাণ ঋভু চৌধুরী পশ্চিমের বাগানে কখনও পোকা খেতে আসে ঝিঝিম পাখি। রংদিদির মুখে শুনেছি তার কথা - সে উড়ে গেলে নাকি বৃষ্টির শব্দে ছেয়ে যায় আশপাশ, বাড়ির কোনো কুমারী মেয়ে অকারণে পোয়াতি হয়ে ওঠে। অরণ্যপ্রাণেদের মতো আমাদেরও নিঃসঙ্গ বিচরণ - কয়েকটি রিপুর তাড়না জ্যান্ত করে রাখে। কেবল বাগানে গেলে, শান্ত হয়ে আসে সমস্ত স্নায়ু। মনে হয়এই বুঝি বৃষ্টির শব্দে উড়ে গেল সেই পাখি - এই বুঝি এক প্রাণ ঝরে পড়ল আমার জরায়ুডাঙায়। ₹ ১৫০ Heading 5 বিভাবকবিতা অর্ণব পণ্ডা বড়ো হতে গিয়ে থমকে দাঁড়াই মাঝে মাঝে নিচু হয়ে আসে পিঠ মায়ের শাড়ির ঘ্রাণ যত নিতে চাই মনে হয়, দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার কাশফুল দুলে ওঠে ট্রেনের বাতাসে যেভাবে বাংলামাস একটু আড়ালে আমি তার মতো বাবার প্রয়াণদিনে একা থাকি নিজের চোখের জলে নিজেকে গড়িয়ে নিই উঠে আসি, দেখি ঈশ্বর তাঁর খড়ি-ফোটা হাত পেতে দাঁড়িয়ে আছেন আমার মায়ের কাছে। ₹ ১৭৫ ঈশ্বর দিনলিপি ভ্রমণকাহিনি ধর্মীয় প্রবন্ধ দেবতত্ত্ব ও হিন্দুধর্ম বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিছক উত্তেজনা জারিত চিৎকার নয়, লেখক তাঁর আহ্বানকে জোরালো করার লক্ষ্যে গড়ে দিয়েছেন জ্ঞান-যুক্তি-দর্শনের বলিষ্ঠ কাঠামো। সাবলীল ভাষায় এমনতর স্বচ্ছ বক্তব্য এবং নিষ্ঠ প্রকাশভঙ্গিমার জন্যই ‘দেবতত্ত্ব ও হিন্দুধর্ম্ম’ বইটি লাভ করে এক স্থায়ী তাৎপর্য। ₹২৫০ মানবপুত্র অপ্রতিম চক্রবর্তী বহু শতাব্দী আগে জর্ডন নদীর পুণ্যবারি প্রত্যক্ষ করেছিল এক হিরণ্যগর্ভ মুহূর্ত¾ এক মর্ত্যমানবের উন্মোচন ঘটেছিল ঈশ্বরপুত্ররূপে। তারপর জর্ডন থেকে জলাঙ্গীতে বয়ে গেছে অবিরাম কালস্রোত। যে অমৃতবাণীর প্রথম উদ্ভাস ঘটেছিল গ্যালিলির পথে পথে- আজ তার প্রতিভাষ এসে পৌঁছেছে সুদূর বাংলার মাটিতে। বড়োদিন তাই আমাদের সকলেরই ‘বড়ো’ হয়ে ওঠার- আমাদের অন্তর্নিহিত দেবত্বের আহ্বানকে অনুভব করার পবিত্রদিন। এই সংকলনের লেখাগুচ্ছে অপ্রতিম চক্রবর্তী সন্ধান করেছেন সেই অমৃতযাত্রার পদচিহ্ন- মহামানবকে খুঁজে ফিরেছেন তাঁর ঐতিহাসিক এবং আধ্যাত্মিক প্রেক্ষাপটে। ‘মানবপুত্র’ সেই দৈবকথার প্রসারের কাহিনি- আমাদের দেশে। ₹২৫০ বুদ্ধদেব (বুদ্ধ বিষয়ক প্রবন্ধ ও কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক মহামানবকে নিয়ে নানাসময় বড়ো যত্ন-শ্রদ্ধা-আশা ভরে লিখেছিলেন আর-এক মহামানব। দুজনের মাঝখানে আড়াই হাজার বৎসরকাল উর্মিময় সমুদ্র হয়ে আছে। এই অকূল পাথার পার করে তথাগতের দিকে আয়ত চোখ মেলে চেয়েছেন কবি রবীন্দ্রনাথ। সেই দৃষ্টি মাখানো রয়েছে এই বইয়ের সর্বাঙ্গে। ₹২৫০ আধ্যাত্ম স্মৃতিকথা মণিকর্ণিকা প্রকাশনী । পুস্তক তালিকা কাশীধামে স্বামী বিবেকানন্দ মহেন্দ্রনাথ দত্ত “৺কাশীধামে শ্রীমৎস্বামী বিবেকানন্দ” পুস্তকাকারে প্রকাশিত হইল। বাঙলার বাহিরে বাঙ্গালীর যে কয়টি শ্রেষ্ঠ কীর্ত্তি আছে তাহার মধ্যে ৺কাশীধামে রামকৃষ্ণ অদ্বৈত আশ্রম ও রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম বাঙলার গৌরব বৃদ্ধি করিয়াছে, শুধু গৌরব বৃদ্ধি নয়, বর্ত্তমান ভারতের সেবা-ধর্ম্মের প্রত্যক্ষ শ্রেষ্ঠ শিক্ষাস্থল। ₹২৫০
- চিঠি দিয়ো লাল তারা । শাশ্বত ব্যানার্জী | Manikarnika.Pub
চিঠি দিয়ো লাল তারা। শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় Our Store Amazon দুচোখে সমুদ্র চষার স্বপ্ন নিয়ে চুপিচুপি বাড়ি ছেড়ে চলে যায় বিজন। বহুবছর পর এক বিশেষ কারণে ফিরে এসে দ্যাখে তার দাদার ছেলে রুকু বড়ো সুন্দর হয়েছে। বিজনকে বড্ড ভালোবেসে ফেলে রুকু। আর অমনি আশ্চর্য কত কিছু ঘটতে থাকে ওদের জীবনে। কোন জাদুবলে সমুদ্রের মতোই অপার হয়ে যায় রোজকার বেঁচে থাকবার আনন্দ। কিন্তু এত আনন্দ এত ভালোবাসা তো সহ্য করে না সংসার। ক্রমাগত ভাঙনেই তার আনন্দ। পরিবারে জন্ম নেয় তীব্র টানাপোড়েন। বিজু কি তাহলে চলে যাবে? আর রুকু, সে-ই বা কেমন করে থাকবে তার কাকুমণিকে ছাড়া? বড়ো হওয়ার পথে কোত্থেকে শক্তি পাবে সে? মূল্য : ₹ ২৫০ শিপিং : ₹ 0 প্রচ্ছদ : শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় মণিকর্ণিকা প্রকাশনী Call & WhatsApp : 8240333741 Our Store Amazon ❛ মাওফ্লাং অরণ্যের গান _________________________ শিলং থেকে পঁয়তাল্লিশ কিলোমিটার দূরে রয়েছে মাওফ্লাং অরণ্য। সে এক পবিত্র বন। ওখানকার খাসি উপজাতির লোকজনেরা বুক দিয়ে আগলে রাখে এই অরণ্যের প্রত্যেক প্রাণী, প্রত্যেক গাছকে। এই গায়ক কল্পনা করেছে ওই পবিত্র অরণ্যের গাছগুলো যদি শব্দ করে গাইতে পারত তাহলে এই গানটা গাইতঃ যে গান আমি ভালোবাসি যে গান আমি ভালোবাসি যে গান আমাকে গভীরভাবে ভাবায় যে আমাকে ডাকে, আমাকে দেখিয়ে নিয়ে চলে পথ কাল যেমন প্রাচীন সে ঠিক ততখানিই বুড়ো চারটে ঋতুর পরেও সে বেঁচে থাকে পৃথিবীর গভীর থেকে ফুটে ওঠে সে দোতারার বুক থেকে উঠে সে বয়ে যায় প্রকৃতির ভেতর তার প্রতিধ্বনি পাবে দ্যাখো, কেমনভাবে উঠছে সে দোতারা থেকে সে মিশে যাচ্ছে শিরায় শিরায় সে চলে যাচ্ছে আত্মার গহনে নিঃসাড়ে, বড়ো নিঃসাড়ে সে মেলে ধরবে ডানা আর শান্ত হয়ে বসবে জলের ওপর, ডাঙার ওপর, বাতাসের পরে। মাত্র চারখানা মিহিন রেশমতন্তু থেকে জেগে ওঠা সুর আমার মাথার ভেতর খেলা করে। বেজে ওঠে বুকের মধ্যে সে আমায় ভেতর জাগিয়ে তোলে আশা। ঠিক যেন জলের প্রবাহ এক অনন্ত ঘূর্ণন। নিশিদিন সে বয়ে যায় আপন খেয়ালে। যে গান আমি ভালোবাসি যে গান আমি ভালোবাসি ছেঁড়া ছেঁড়া বাক্যে গানটা বাংলায় দাদাকে বলে দিল বিজু। একটা বাংলা কবিতার মতো করে। সুজনের ভেতর কবিত্ব জিনিসটা নেই। ওর পছন্দ বেশ যুক্তিগ্রাহ্য কাঠখোট্টা বিজ্ঞান। তবু আজ এই গানটা যেন খানিক স্পর্শ করল সুজনকে। একটা সুর কেমনভাবে ডানা মেলে জলে স্থলে বাতাসে শান্ত হয়ে বসে সেটা ও দেখতে পেল এই মাঠের ওপর। বিজুর শোনানো গানটাকে দেখা যাচ্ছে - সে কাছে, আবার সে দূরেও, এইভাবে একাকার হয়ে আছে। ❜