ডব্লিউ ডব্লিউ এফ-এর নরদানবদের গটআপেও একটা ফাইট থাকে, নীতীশ খেলায় এলই না! তরুবালাকে সায়ম জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি কী জানো, নীতীশ চুপ থাকল কেন?
এত অবাক তরু আগে কখনও হয়নি। এক বন্ধু অন্য বন্ধুকে চিনতে পারে না, বন্ধুত্ব বলে কোনো সম্পর্কে বিশ্বাস করে না বা বন্ধুত্বকে ছলনা মনে করে - তরু ঢের দেখেছে। কিন্তু সায়ম ও নীতীশের প্রায় তিন যুগের গূঢ় সম্পর্কে অপরিমেয় অপরিচয় জেনে সে স্তম্ভিত হয়।
তরুবালা জানাল, নীতীশ তখন শাঁখাইঘাটে বর্ষার অজয়ের তীরে জনৈক শ্রীধরের পূর্বপুরুষের বৃত্তান্ত শুনেছে, শরতের জিয়াগঞ্জে খচ্চরে টানা গাড়ির বিহারি চালকদের গ্রামের বাড়ির খোঁজখবর নিয়েছে, সুরুলে হেমন্তের বিকেলে পুকুরে নেমে হাততালি দিয়ে ফড়িং উড়িয়েছে।
নীতীশ এরকম করে, ভাবতেই পারে না সায়ম। এ নীতীশকে সে চেনে না। আপাদমস্তক নীতিহীন, ধান্দাবাজ, ভণ্ড, লোভী, এবং প্রচ্ছদে অত্যন্ত শোভন, সুভাষ একটা নীতীশকেই সে চেনে। তারই কথা হচ্ছে। তরুবালা যে নীতীশের কথা বলছে সে কি বানানো? মেয়েটা হয়তো এরকম এক নীতীশকে
চেয়েছিল যে পুকুরে নেমে হাততালি দিয়ে ফড়িং ওড়াবে, গাছে উঠে কালোজাম পেড়ে দেবে, দূরের বাগান থেকে এনে দেবে গুলঞ্চ। তরুবালা তার স্বপ্নের নীতীশের ছবি তুলে ধরছে। পুকুরে নেমে ফড়িং ওড়ানোর চেয়ে পেসমেকারের এজেন্টের সঙ্গে কমিশনের পার্সেন্টেজ নিয়ে কথা বলে নীতীশ অনেক বেশি তৃপ্তি পায়। গাড়োয়ানের গ্রামের বাড়ির খবর শোনার চেয়ে সে ঢের বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের অতীতের খুঁটিনাটি জানা। নীতীশ হয়ে থাকতে নীতীশকে প্রচুর সময় দিতে হয়। ওর হাতে নষ্ট করার সময় নেই।
সায়ম তরুবালাকে এসব বলবে না। গ্রহণ করতে পারো না, এটুকু সাহসও নেই, অসহায় শিশুকে মেরে ফেলার কথা ভাবো! তোমার না আছে সংযম, না সাহস। তুমি একটা লাফাঙ্গা, এবং তুমি যার সঙ্গে লাগিয়েছ সে-ও তাই। সভ্যতার তিনটি মূল্যবান শব্দ ও ধারণা - প্রেম, সাহস, শিশু - তোমরা বিষ্ঠালিপ্ত করেছ। কথাগুলো বলতেই পারত নীতীশ। বলেনি। কিন্তু না বলাটা কি সায়মের পাপের স্মারক হিসেবে আগলে রাখা নয়? সায়মকে নিয়ত বিদ্রুপ করা নয়? সায়মের যাবতীয় মূল্যবোধের কথাবার্তাকে অন্তঃসারশূন্য করে দেওয়া নয়? আপশোশ হয়, এত বড়ো ভুল সে করতে গেল কেন? নীতীশের হাতে ভয়ংকর ডকুমেন্ট তুলে দিল! যা দিয়ে নীতীশ সায়মের সৎ সাধু বেঁচে থাকাকে যে কোনোদিন ফাঁসিয়ে দিতে পারে।
সেই বাবাকে সেদিনের শিশু এখন আক্রমণ করছে। এটা সায়মের প্রাপ্য।