বিন্তির গল্প । সুদেষ্ণা মৈত্র
বিষয় : গল্প
প্রচ্ছদ : ঋভু চৌধুরী
মণিকর্ণিকা প্রকাশনী
মূল্য : ₹১৮০
যোগাযোগ (কল ও হোয়াটস্অ্যাপ) : 8240333741
আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির একটি গল্প এখানে দেওয়া
হল।
চোর!
বিন্তি এখন গোয়েন্দা কাহিনি পড়ছে। আজকাল সঙ্গে তাই রাখছে মোটা ডাইরি, টর্চ, পেন, ম্যাগনিফাইং গ্লাস আর মানচিত্রের একটা বই। কোন দেশে কোন রহস্য কীভাবে সমাধান হয়েছিল, সেইসব দেখতেই মানচিত্রের বই। এইসব জিনিসের প্রাচুর্য পড়ার টেবিলে হওয়ার জন্য দুই-দিন ধরে হলুদ মলাটের ইতিহাস বইটা, লাল রঙের গ্রামারের বইটা কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু কি তাই, বাড়ির লাল আর হলুদ রঙের অনেক জিনিসই মিসিং। একটা কিছু হচ্ছে নিশ্চয়ই। বিন্তি গোয়েন্দা রেডি।
এবার দিনের বেলাতেও চুরি শুরু হল। তবে রাতের বেলায় বেশি। পারুমাসি তো তন্নতন্ন করে খুঁজছে কিছুই পাচ্ছে না। লাল লঙ্কার প্যাকেট, ব্রিটিনিয়া বিস্কুটের প্যাকেট উধাও। ম্যাগির প্যাকেট, নোনতা ওটসের প্যাকেট, হলুদের প্যাকেট সব উধাও! এতদিন শুধু রান্নাঘরের জিনিসপত্র যাচ্ছিল। কিন্তু এখন দেখা গেল বিন্তির পড়ার টেবিলে হানা দিয়েছে চোর! গোয়েন্দা দিদিমণি তখন বাড়ির সবাইকে ব্যস্ত করে তুলল। তাতে বাড়ির সবাই নড়ে-চড়ে বসল। বিন্তির মা বললে, ‘চোর মোটেও বই নেয়নি। স্কুলের ডেস্কে গিয়ে দেখবে কাল, বই দুটো সেখানে বসে আছে।’
বিন্তি বেশ জোরের সঙ্গে বলল, ‘আমি স্কুলে ইতিহাস ও গ্রামার বই নিয়ে যাইনি। বিশ্বাস করো। ভেবো না, এর ব্যবস্থা করতে হবে। চিন্তা কোরো না, বিন্তি গোয়েন্দা আছে যতক্ষণ, ততক্ষণ ভাবতে হবে না।’
ঠাম্মা হাসলেন। মা বললেন, ‘হয়েছে হয়েছে তোমার গোয়েন্দাগিরি, চোর এসে বাড়ি তছনছ করছে, উনি সাহস দিচ্ছেন। মা আর হাসবেন না। আমার বেশ ভয় ভয় করছে।’ বিন্তি মায়ের দিকে এক অভয়ের হাসি দিল।
ধুম-ধুম-ধুম পত-পত-পত। কী হল? কে? কে ওখানে? পারুমাসি ততোধিক চিৎকার করতে লাগল। বলল, ‘আমি দেখলাম হলুদ আর লাল চোখ নিয়ে কে যেন ঘুরছে। ও রে বাবা!’ সন্ধেবেলায় ঘরে কী যেন পায়ে ঠেকল। মাসি আবার চিৎকার করেই বুঝল বেশ শক্ত কী একটা পায়ে লাগছে। তাকিয়ে দেখল লাল রঙের বিন্তির বই। বই দেখে মা বললেন, ‘তবে চোর বই নেয়নি তো! এখন কী হবে উপায়!’
এমন সময় বিন্তির বাবা ফিরলেন অফিস থেকে। সব শুনে, ‘ও কিছু না’ বলে স্নানে চলে গেলেন। হঠাৎ সেই পত-পত-পত আওয়াজ। একটু ঘাবড়ে গেলেন বটে। বিন্তির টর্চ নিয়ে বাথরুমের আনাচে-কানাচে আলো ফেললেন। টিকটিকির মতো কী যেন মনে হল চলে গেল। বিন্তির মা ভয়ে ঘামতে আরম্ভ করেছেন। বিন্তি এল। সে বলল, ‘আজ রাতেই এই সমাধান হবে। বাড়িতে বিন্তি গোয়েন্দাকে ফাঁকি দেওয়া সহজ নয়।’
বিন্তি সোজা চলে এল পড়ার ঘরে। স্কেল, পেন্সিল নিয়ে খাতায় ছবি আঁকা হল। ডানদিক, বামদিক ঘুরে ঘুরে মন্ত্রের মতো কীসব বলা হল। তারপর মা, ঠাম্মা, মাসিকে ডেকে বলা হল চটপট রাতের খাওয়া শেষ করতে। তারপর গোয়েন্দামশাই তার অনুসন্ধানী কাজকর্ম চালু করবে। রাতের খাওয়া তাড়াতাড়ি শেষ হল। গোয়েন্দা বিন্তি প্যান্ট শার্ট টর্চ হাতে এল খাওয়ার ঘরে। মা আর মাসিকে বলা হল টেবিলে লাল, হলুদ যা জিনিস আছে নিয়ে সাজাতে। নিজে আলুর ঝুড়ির সঙ্গে দড়ি বেঁধে এমন ভাবে রাখল, যে চোর এলেই গোয়ান্দা খপ করে ধরবে। অন্যদিকে জানলা, দরজা আটকে রাখা হয়েছে। বাথরুমের দরজা বাইরে থেকে আটকানো। দরজার নীচের ফাঁকে মোটা কাপড় দেওয়া। সব আলো নিভিয়ে ডিম আলো জ্বলছে সব ঘরে। খাওয়ার ঘরে শুধু মোমবাতি।
আবার আওয়াজ পত-পত-পত। মা বললেন, ‘ওরে আমি চললাম।’
ঠিক এইসময় খাওয়ার টেবিলে কী একটা ধপ শব্দ। সঙ্গে সঙ্গে গোয়েন্দা তৎপর হতে গেল, মোমবাতি গেল উল্টে। মোমবাতি উল্টে গেলে কী হবে, গোয়েন্দার কাছে ছিল টর্চ। টর্চের আলাতেই বাজি মাত। বড়ো টিকটিকি মতো কী একটা ধরা পড়ল ঝুড়ির ফাঁকে। গলন্ত মোমে পা লেগে প্রাণীটা বেশি দূর এগোতে পারেনি, লেজটা আটকে গেছে ঝুড়িতে। সঙ্গে আর-একটা বড়ো ঝুড়ি এনে চাপা দেওয়া হল। দেখা গেল লাল, হলুদ আভা দিচ্ছে। চোখমুখ হলুদে ঢাকা। বোঝা গেল মাসি কেন চিৎকার করে বলছিল, ‘রান্না ঘরের হলুদের প্যাকেট, রান্নাঘরেরর হলুদের প্যাকেট।’
বাবা এসে বললেন, ‘আজ যে যার মতো শুয়ে পড়ো, কাল চোরের সাজা হবে।’ বিন্তি তো শুনলই না। সারা রাত জেগে রইল। বিন্তি সকাল হতেই চোর দেখতে যেই যাবে বলে ঝুড়িটা একটু নাড়াল ঝুড়ি ফাঁক হল। অমনি চোর পলাতক।
বাবা বললেন, ‘গোয়ন্দাদিদি বুঝলেন, দিনকয়েক আগে ঝড়ে সামনের বড়ো গাছটা পড়ে গেল, তাই প্রাণভয়ে আশ্রয় নিল তোমাদের চোর গিরগিটি আমাদের বাড়িতে। আবার আজ প্রাণ ভয়ে পালাল।’